‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী’ PDF Quick download link is given at the bottom of this article. You can see the PDF demo, size of the PDF, page numbers, and direct download Free PDF of ‘Biography of Ishwarchandra Vidyasagar’ using the download button.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী – Biography Of Ishwarchandra Vidyasagar PDF Free Download
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী
জীবনে আজ যতটুকু শিক্ষা হইলো সারা,
আমি নিরুত্তর হয়ে ভাবি, তুমি না থাকিলে সেটুকুও হত কিনা সারা …!!
কি ভাবছেন, কাকে স্বরণ করছি ? তিনি হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ তথা বাংলা ভাষার জনক ও বাঙালি জীবনের স্মারক সিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও যিনি দেখিয়েছেন কর্ম-নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাসকে পাথেয় করে কিভাবে ব্যক্তিত্বশীল পুরুষ হয়ে ওঠা যায়। তিনিই শিখিয়েছেন সমাজকে রক্ষা করতে ও বাঙালি জাতিকে স্বমহিমায় বিরাজ করতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ‘দয়ার সাগর’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ২৬শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির বিরসিংহ গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন (বীরসিংহ গ্রামটি তৎকালীন সময়ে হুগলী জেলার অন্তর্গত হলেও তা অধুনা ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত)।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় কলকাতায় স্বল্পবেতনের চাকুরীজিবী ও মাতা ভগবতী দেবী ছিলেন গৃহপত্নী। এ কারণেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শৈশব জীবন তার মা ও ঠাকুরমা শ্রীমতী দূর্গাদেবীর সঙ্গেই অতিবাহিত হয়। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পঠনরত সময়ে ক্ষীরপাই নিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের কন্যা দীনময়ী দেবীর সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন।
শিক্ষা জীবন :
পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বাল্যশিশু ঈশ্বরচন্দ্রকে মাত্র চার বছর নয় মাস বয়সে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। তার পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণের উদ্যোগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক উৎসাহী জ্ঞানী যুবক বীরসিংহ গ্রামে একটি নতুন পাঠশালা স্থাপন করলে আট বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র ঐ পাঠশালায় ভর্তি হন। আদর্শ শিক্ষক কালীকান্তের পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেন।
১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কথিত আছে, পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষাগুরু কালীকান্ত মহাশয় ও চাকর আনন্দরামের সহিত পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলি অল্প বয়সেই আয়ত্ত করেছিলেন।
কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে থাকাকালীন সময়ে মাত্র নয় বছর বয়সে ১৮২৯ সালের জুন মাসে কলকাতা গভর্মেন্ট সংস্কৃত কলেজে (যা বর্তমানে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত) ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর তিনি একই শ্রেণীতে সাড়ে তিন বছর অধ্যায়ন করেন। এই কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের সহপাঠী ছিলেন বিখ্যাত মদনমোহন তর্কালঙ্কার।
ঈশ্বরচন্দ্র ব্যাকরণ পাঠের পাশাপাশি ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণিতেও ভর্তি হন। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি এবং ‘আউট স্টুডেন্ট’ হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা পারিতোষিক পান। তিন বছর ব্যাকরণ শ্রেণিতে পঠনপাঠনের পর বারো বছর বয়সে প্রবেশ করেন কাব্য শ্রেণিতে। ১৮৩৩ সালে ‘
পে স্টুডেন্ট’ হিসেবেও ঈশ্বরচন্দ্র ২ টাকা পান। ১৮৩৪ সালে ইংরেজি ষষ্ঠশ্রেণির ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক পারিতোষিক হিসেবে পান। ১৯৩৫ সালের নভেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজ থেকে ইংরাজি শিক্ষা উঠিয়ে দেওয়া হলে এখানেই ইংরাজি শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বর্ষের সাহিত্য পরীক্ষায় প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হয়ে পনেরো বছর বয়সে অলংকার শ্রেণীতে প্রবেশ করেন। অলংকার শাস্ত্র একটি কঠিন বিষয় হওয়ার সত্ত্বেও মাত্র এক বছরের মধ্যে সাহিত্য দর্পন, কাব্যপ্রকাশ ও রস গঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে ব্যুৎপত্তি অর্জন করে।
১৮৩৬ সালে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার অর্জনের মাধ্যমে অলংকার পাঠ শেষ করেন। ১৮৩৭ সালের মে মাসে ঈশ্বরচন্দ্রের মাসিক বৃত্তি বেড়ে হয় আট টাকা।সে বছরই অর্থাৎ ১৮৩৭ সালে ঈশ্বরচন্দ্র স্মৃতি শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই পরীক্ষাতেও তিনি অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন এবং হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তারপরও পিতার অনুরোধে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণিতে। ১৮৩৮ সালে বেদান্ত পাঠে প্রথম স্থান অধিকার অর্জনের মাধ্যমে তা সমাপ্ত করেন। সংস্কৃতে শ্রেষ্ঠ গদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা পুরস্কারও পেয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৪০-৪১ সালে ন্যায় শ্রেণিতে পঠনপাঠন করেন ঈশ্বরচন্দ্র। ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা-সর্বসাকুল্যে ২৩৩ টাকা পারিতোষিক পেয়েছিলেন।
কর্মজীবন :
১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা সম্পন্ন করার পর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ৫০ টাকা বেতনে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৮৪৬ সালের ৫ই এপ্রিল এই পদে দায়িত্ব সামলানোর পর ৬ই এপ্রিল থেকে একই বেতনে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সম্পাদকের ভার গ্রহণ করে।
১৮৪৭ সালে গড়ে তোলেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজেটরি নামে একটি বইয়ের দোকান এবং বন্ধু মদনমোহনের সম-অংশী দারিত্বে গড়ে তোলেন সংস্কৃত যন্ত্র নামে একটি ছাপাখানা। এখানের তার প্রথম গ্রন্থ বেতাল পঞ্চবিংশটি প্রকাশিত হয়। ১৮৪৭ সালের জুলাই মাসে কলেজ পরিচালনার কাজে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সাথে মতান্তর ঘটলে সংস্কৃত কলেজের সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। এরপর ১৮৪৯ সালের মার্চ মাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেড রাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে চাকুরী গ্রহণ করেন। ১৮৫০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের চাকুরী পরিত্যাগ করে সংস্কৃত কলেজের সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন।
১৮৫১ সালের জানুয়ারি মাসে ঐ কলেজেরই অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৮৫৩ সালে তার জন্মভূমি বিরসিংহ গ্রামে চালু করেন প্রথম অবৈতনিক বিদ্যালয়। ১৮৫৫ সালের ১৩ই এপ্রিল অর্থাৎ ১৯১২ সংস্কৃত বর্ষের ১লা বৈশাখ বাংলা শিশু পাঠ্য বর্ণমালা শিক্ষাগ্রন্থ বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়। ঐ বৎসরের জুলাই মাসে সংস্কৃত কলেজের অধীনে নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করেন।
এরপর দক্ষিনবঙ্গের চার জেলা অর্থাৎ নদীয়া জেলায় ৫টি, হুগলী জেলায় ৫টি, বর্ধমান জেলায় ৫টি ও মেদিনীপুর জেলায় ৪টি বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য তিনি হুগলী জেলায় ৭টি ও বর্ধমান জেলায় ১টি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তোলেন । এছাড়াও ১৯৫৮সালে হুগলী জেলায় আরো ১৩টি, বর্ধমান জেলায় ১০টি, মেদিনীপুরে ৩টি ও নদীয়া জেলায় ১টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৮ সালের নভেম্বরে অধিকর্তার সাথে মতবিরোধের জেরে অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেন।
শিক্ষা-সমাজ সংস্কার :
যুগে যুগে সমাজে যখনই দেখা দিয়েছে সামাজিক সংকট তখনই দেখা দিয়েছে ভগবানের এক রূপ। তেমনি ঈশ্বরচন্দ্রের হাত ধরে এসেছে তৎকালীন সমাজের পুরুষ শাষিত নারীর অত্যাচার থেকে মুক্তি। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে নারীশিক্ষার প্রগতি না করতে পারলে নারী সমাজের অগ্রগতি কখনই সম্ভব না।
তাই তিনি ১৮৫৭-১৮৫৮ বর্ষে চারটি জেলায় মোট নারী ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এছাড়া বাংলা তথা মাতৃভাষা শিক্ষার অগ্রগতির জন্য তারই তত্ত্বাবধানে নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন। এছাড়াও হার্ডিঞ্জের পরিকল্পনা মতো ১০১টি বঙ্গ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার হাতেখড়ি জন্য তিনি বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড রচনাও করেন।
মাতা ভগবতী দেবীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার উদ্দেশ্য স্বরূপ নারীমুক্তি আন্দোলনকে পাথেয় করে তোলেন। শাস্ত্রীক নিয়মের দোহাই দেওয়া সমাজপতিদের তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে বিধবা নারীরাও মানুষ, তাদেরও সমাজে বাঁচার অধিকার আছে। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর সহায়তায় রাজা রামমোহন রায় যে ‘সতীদাহ প্রথা’ রদ করেছিলেন, তারই পন্থা হিসাবে বিদ্যাসাগর মহাশয় ১৮৫৬ সালের ২৬শে জুলাই ‘বিধবা বিবাহ আইন’ পাশও করিয়ে বিধবা নারীদের দেন সমাজে মুক্তির স্বাদ। এমনকি তিনি নিজ খরচে বিধবাদের বিবাহও দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি তথাকথিত পুরুষ সমাজের বহু বিবাহ রদ করতে চেয়ে ছিলেন।
সাহিত্য চর্চা :
১৮৪৭ সালে বেতাল পঞ্চবিংশতী হিন্দি থেকে বাংলা অনুবাদ করার মাধ্যমে তার সাহিত্যচর্চায় খ্যাতি অর্জন করতে থাকে। এরপর তিনি শকুন্তলা, সীতার বনবাস, মহাভারতের উপক্রমনীকা সংস্কৃত থেকে বাংলায় এবং বাঙ্গালার ইতিহাস, জীবন চরিত, নীতিবোধ, বোধদয়, কথামালা ইংরাজি থেকে বাংলায় রচনা করেন।
শিক্ষামূলক গ্রন্থ হিসাবে ১৮৫৫ সালে বর্ণপরিচয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮৫১-১৮৫২ তে ঋজুপাঠের ১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড, ১৮৫৩ সালে ব্যাকরণ কৌমদি ও সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা রচনা করেন।
Author | – |
Language | Bengali |
No. of Pages | 4 |
PDF Size | 0. 3 MB |
Category | Biography |
Source/Credits | karmodishari.co.in |
Related PDFs
The Autobiography of Benjamin Franklin PDF
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী – Biography of Ishwarchandra Vidyasagar Bengali Book PDF Free Download